স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে হাজার হাজার মানুষ খুন, গুম, ধর্ষণ, বোমা হামলা ও নির্যাতনের বিচারের দাবিতে আজ ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদী সমাবেশ “মায়ের কান্না” ও তথ্য চিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচীতে বিএনপির রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত প্রতিবাদী সমাবেশ ও তথ্য চিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য-সচিব অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার পূর্ণিমা রাণী শীল, সাতাত্তর সালে জিয়ার হাতে নির্যাতিত সেনা পরিবারের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রতিবাদী সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাত সমগ্র দেশে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে নিরীহ মানুষদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল। বিএনপি-জামাতের এসব সন্ত্রাসীদের বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। চখা রাজাকার পুত্র মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছিল। এই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য সবসময় মাঠে থাকবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবৈধ সামরিক শাসক খুনী জিয়া কর্তৃক বিনা বিচারে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে ও সৈনিককে হত্যার অপরাধে খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার করতে হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি খালেদা ও তারেককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে চরমভাবে অবমাননা করেছেন। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার অপরাধে মির্জা ফখরুলকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুলকে বহিষ্কার না করে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মেনে এদেশে সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করতে হবে। বিএনপিসহ কতিপয় গণতন্ত্র মঞ্চ নামক রাজনৈতিক দোকানগুলো এখনও পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নেয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার শামিল। যেসব দল বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানবে না তারা প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জাতির শত্রু। এরা একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের পেত্মাত্মা ও রাজাকার-আলবদরদের দোসর। বাংলাদেশে এদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। নির্বাচন কমিশনের নিকট আহবান, অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আগুন সন্ত্রাস, সম্প্রতি রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করার অপরাধে বিএনপি নামক অগ্নি সন্ত্রাসী দলের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও অগ্নি সন্ত্রাসী দল বিএনপির রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল না করলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী সন্ত্রাসী দল বিএনপিকে দ্রুত নিষিদ্ধসহ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আগুন সন্ত্রাসীদের বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ঠাকুরগাঁওয়ের চখা রাজাকারের পুত্র মির্জা ফখরুল সম্প্রতি তারেক ও খালেদাকে মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে আমাদেরকে চরমভাবে অপমান করেছে। রাজাকার পুত্র মির্জা ফখরুলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির আহমেদ জালাল বিচ্ছু জালাল বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। বিএনপি এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের দলে পরিণত হয়েছে। রাজাকার পুত্র মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের আইএসআই গুপ্তচর জিয়া কখনোই বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন না। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী খুনী জিয়ার তৈরী বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশে বিএনপি রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আহবানে প্রয়োজনে আবার স্বাধীনতা বিরোধীদের নির্মূল করতে মাঠে নামবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।”
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, “স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে হাজার হাজার মানুষ খুন, গুম, ধর্ষণ, বোমা হামলা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে। জিয়ার অবৈধ শাসনামলে হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল হোতা বিএনপি। এরা আবার রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদেরকে রুখে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষদেরকে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপির শাসনামলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে। বর্তমান সরকার সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ধারা যেকোন মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।”
পূর্ণিমা রাণী শীল বলেন, “বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে আমার ওপর কি ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছিল তা পুরো দেশবাসী সে সময় দেখেছে। তৎকালীন সময় আমি কোন ন্যায়বিচার পাইনি। সেদিন আমার কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিএনপি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বিএনপি-জামাত আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে আবার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থেকে জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিল। হাওয়া ভবনের নীলনকশা অনুসারে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫৫০টি বোমা হামলা, বাংলাভাই ও জেএমবির উত্থানসহ সারাদেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে”
ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, “মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে? গণতন্ত্রে যে কোনো রাজনৈতিক দলের ভোট চাওয়ার অধিকার আছে। সেই হিসেবে বিএনপিও মানুষের কাছে ভোট চাইতে পারে। তাতে কোনো বাধা নাই। কেউ চাইলে বিএনপিকে ভোটও দিতে পারে। তাতেও কোনো বাধা নাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে। বিএনপি কি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনগণের সেই আস্থা অর্জন করতে পেরেছে? বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া বিদেশে পলাতক। ফলে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে না।
সাজাপ্রাপ্ত এবং নেতৃত্ব শূন্য- এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি মানুষের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ফলে নির্বাচন ব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার চেয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার দিকেই তারা বেশি তৎপর।
নির্বাচনের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে। বিএনপি-জামাত আমলের ভঙ্গুর অর্থনীতি গত ১২ বছরে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮.১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। সোয়া ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু বিএনপি আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিএনপিকে দেশের মানুষ কখনোই ভোট দেবে না।”
প্রতিবাদী সমাবেশ “মায়ের কান্না” থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো যথাক্রমে-
১। বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা, অগ্নি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের সাথে জড়িতদেরকে বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে।
২। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিক হত্যার অপরাধে অবৈধ সামরিক শাসক খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার করতে হবে।
৩। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আন্দোলনের নামে সমগ্র দেশে আগুন দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অপরাধে বিএনপির রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধসহ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
৪। জঙ্গিবাদ, অগ্নি সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও বোমা হামলার মদদদাতা বিদেশে পলাতক আসামি খাম্বা তারেককে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে।